Saturday, September 10, 2016

পেট ফাপা থেকে মুক্তি

সাধারণত অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের কারণে পেট ফোলাভাব হয়। তবে অনেক সময় দ্রুত খাওয়া, পায়খানার সমস্যা, ওজন বাড়া, ল্যাকটোজে অসহনীয়তা প্রভৃতি কারণে পেট ফোলাভাব হয়
পেট ফোলাভাবের পাশাপাশি এই সময় হতে পারে পেট ব্যথা, হজমে অসুবিধা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া
জীবনধারাবিষয়ক ওয়েবসাইট বোল্ডস্কাইয়ের স্বাস্থ্য বিভাগে জানানো হয়েছে পেট ফোলাভাব কমানোর ঘরোয়া উপায়ের কথা
উপাদান
• 
শসা এক-দ্বিতীয়াংশ কাপ
• 
লেবুর জুস এক চা চামচ
• 
আদা কয়েক টুকরো
• 
মধু এক টেবিল চামচ
এই উপাদানগুলো পাকস্থলীর সমস্যা যেমন গ্যাস, অ্যাসিডিটি, পেট ফোলাভাব কমাতে কাজ করে। শসার মধ্যে রয়েছে পেট জ্বালাপোড়া কমানোর উপাদান। আদা রসুনের মিশ্রণ অ্যাসিড রিফ্লাক্স কমাতে কাজ করে। আর মধুর মধ্যে রয়েছে প্রদাহরোধী উপাদান। এটি পাকস্থলীর সমস্যা কমায়
প্রণালি
• 
উপাদানগুলো একত্রে ব্ল্যান্ডারে দিন
• 
এর মধ্যে সামান্য পানি মিশিয়ে ব্ল্যান্ড করুন
• 
পানীয়টি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে
• 
পেট ফোলাভাব থাকলে পানীয়টি পান করবেন

Thankuni

থানকুনি পাতার গুনাগুন


বাংলা নাম থানকুনি। অঞ্চলভেদে এটি টেয়া, মানকি, তিতুরা, থানকুনি, আদামনি, ঢোলামানি, থুলকুড়ি, মানামানি , ধূলাবেগুন, আদাগুনগুনি নামে পরিচিত। ইংরেজি নাম Indian Pennywort, 

যার বৈজ্ঞানিক নামঃ Centella asiatica 
বর্গ: Apiales 
পরিবার: Mackinlayaceae 
গণ: Centella 
প্রজাতি: C. asiatica 

থানকুনি একটি অনাবাদী ঔষধি গাছ। এটি বাড়ির আনাচে-কানাচে, রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়ে, মাঠে স্যাঁতস্যাতে জায়গাগুলোতে বর্ষাকালে বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া সারা বছরই কম-বেশি পাওয়া যায়। 

এই গাছ পাওয়া যায় ভারত, সিংহল, উত্তর অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, এবং এশিয়ার অন্যান্য প্রান্তে ভেষজ হিসাবে এর বহুল ব্যবহার আছে । এর বহুল ব্যবহার আছে আয়ুর্বেদিক, প্রাচীন আফ্রিকীয়, চৈনিক ইত্যাদি অনেক দেশের দেশী চিকিৎসাবিদ্যায়। 


আয়ুর্বেদিকশাস্ত্র মতে, থানকুনি মানব শরীরের নানা রোগ নিরাময়ের মহৌষধ। 

ব্যবহার্য অংশ: মূল, কান্ড , ও পাতা। 

পরিচিতিঃ এই গাছটি ক্ষুদ্র লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর পাতা ক্ষুদ্র গোলাকৃতির। পাতার ধারে খাঁজ রয়েছে। বাংলাদেশের সর্বত্র এই গাছটিকে দেখতে পাওয়া যায়। তবে উপকূলীয় লবনাক্ত আবহাওয়ায় এটি ভালো জন্মে। গ্রামীণ সাধারণ মানুষের কাছে এটি খুবই জনপ্রিয়। 

বংশবিস্তার : বসন্তকালে থানকুনি লতার ফুল আসে এবং গ্রীষ্মতকালে ফল পাকে। বীজের মাধ্যমেও অঙ্গজ জনন উভয়ভাবেই থানকুনির বংশবিস্তার হয়। প্রতিটি গিট বা node থেকে শিকড় বের হয় এবং শিকড়সহ লতা এনে আর্দ্র জমিতে রোপন করলেই থানকুনি জন্মে। তবে খেয়াল রাখবে হবে যে এটি আর্দ্র মাটি পচন্দ করলেও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। বাংলাদেশের মাটি থানকুনি জন্মানোর জন্য খুবই উপযোগী হলেও নার্সারীতেও এ লতার চারা পাওয়া কঠিন। তবে গ্রামাঞ্চলে এটি সর্বত্রই পাওয়া যায়। 

থানকুনির গুণাগুণ ও ব্যবহার ঃ 

থানকুনিতে যে সকল রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে সে গুলা হলো : 
» Indocentelloside 
» Brahmoside 
» Brahminoside 
» Asiaticoside 
» Thankuniside 
» Isothankuniside, 
» Triterpene glycosides 
» Indocentoic, brahmic 
» Mesoinositol 
» Oligosaccharide 
» Centellose 
» Kaempferol 

জ্বর : থানকুনি পাতার রস ১ চামচ ও শিউলি পাতার রস ১ চামচ মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেলে জ্বর সারে। 

পেটের পীড়া : অল্প পরিমাণ আমগাছের ছাল, আনারসের কচি পাতা ১টি, কাঁচা হলুদের রস, ৪/৫ টি থানকুনি গাছ শিকড়সহ ভাল করে ধুয়ে একত্রে বেটে রস করে খালি পেটে খেলে পেটের পীড়া ভাল হয়। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা আরো বেশি কার্যকর। 

গ্যাস্ট্রিক : আধা কেজি দুধে ১ পোয়া মিশ্রি ও আধা পোয়া থানকুনি পাতার রস একত্রে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে ১ সপ্তাহ খেলে গ্যাস্ট্রিক ভাল হয়। 

হজম শক্তি বৃদ্ধি : বেগুন/পেঁপের সাথে থানকুনি পাতা মিশিয়ে শুকতা রান্না করে প্রতিদিন ১ মাস খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। 

রক্ত দূষণ রোধে থানকুনি : প্রতিদিন সকালে খালিপেটে ৪ চা চামচ থানকুনি পাতার রস ও ১ চা চামচ মধু/ মিশিয়ে ৭ দিন খেলে রক্ত দূষণ ভাল হয়। 

বাক স্ফুরনেঃ যে সব বাচচা কথা বলতে দেরি করে অথবা অস্পষ্ট, সে ক্ষেত্রে ১ চামচ করে ধান কুনি পাতার রস গরম করে ঠান্ডা হলে ২০/২৫ ফোঁটা মধু মিশিয়ে ঠান্ডা দুধের সাথে কিছুদিন খাওয়ালে অসুবিধাটা সেরে যায়। 

খুসখুসে কাশিতে : ২ চামচ থানকুনির রস সামান্য চিনিসহ খেলে সঙ্গে সঙ্গে খুসখুসে কাশিতে উপকার পাওয়া যায়। ১ সপ্তাহ খেলে পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবে। 

আমাশয় : প্রতিদিন সকালে ৫/৭ টি থানকুনি পাতা চিবিয়ে ৭ দিন খেলে আমাশয় ভাল হয়। অথবা, থানকুনি পাতা বেটে পাতার রসের সাথে চিনি মিশিয়ে দুই চামচ দিনে দুই বার খেলে আমাশয় ভাল হয়। 

পেট ব্যথা : থানকুনি পাতা বেটে গরম ভাতের সাথে খেলে পেট ব্যথা ভাল হয়। 

লিভারের সমস্যা : প্রতিদিন সকালে থানকুনির রস ১ চামচ, ৫/৬ ফোঁটা হলুদের রস (বাচ্চাদের লিভারের দোষে) সামান্য চিনি ও মধুসহ ১ মাস খেলে লিভারের সমস্যা ভাল হয়। 

লাবণ্যতা : যদি মুখ মলিন হয়, লাবণ্যতা কমে যায় তবে ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস দুধ দিয়ে খেতে হবে। নিয়মিত করলে উপকার পাবেন। 

দূষিত ক্ষত : মূলসহ সমগ্র গাছ নিয়ে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে দূষিত ক্ষত ধুতে হবে। 

মুখে ঘা : থানকুনি পাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে গারগিল করতে হবে। 

আঘাত : কোথাও থেঁতলে গেলে থানকুনি গাছ বেটে অল্প গরম করে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে প্রলেপ দিলে উপকার পাবেন। 

সাধারণ ক্ষত : থানকুনি পাতা বেটে ঘিয়ের সঙ্গে জ্বাল দিয়ে ঠাণ্ডা করে তা ক্ষত স্থানে লাগাতে হবে। 

চুল পড়া : অপুষ্টির অভাবে, ভিটামিনের অভাবে চুল পড়লে পুষ্টিকর ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। 

পেটের দোষ : মলের সঙ্গে শ্লেষ্ণা গেলে, মল পরিষ্কারভাবে না হলে, পেটে গ্যাস হলে, কোনো কোনো সময় মাথা ধরা এসব ক্ষেত্রে ৩-৪ চা চামচ থানকুনি পাতার গরম রস ও সমপরিমাণ গরুর কাঁচা দুধ মিশিয়ে খেতে হবে। নিয়মিত খেলে উপকার পাবেন। 

স্মরণশক্তি : মনে না থাকলে আধা কাপ দুধ, ২-৩ তোলা থানকুনি পাতার রস ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে হবে। 

নাক বন্ধ : ঠাণ্ডায় নাক বন্ধ হলে, সর্দি হলে থানকুনির শিকড় ও ডাঁটার মিহি গুঁড়ার নস্যি নিলে উপকার পাওয়া যায়। 


এখন প্রশ্ন হলো ব্যস্ত নগরজীবনে থানকুনি পাতা খোঁজে পাবেন কোথায়। গ্রামে অবশ্য থানকুনি গাছের অভাব নেই। সহজেই দেখা মেলে ঝোপে জঙ্গলে। শহরাঞ্চলে থানকুনির খোঁজ পাওয়া একটু কঠিনই বটে। তবে রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কাঁচা বাজারগুলোতে একটু খোঁজ করলেই মিলবে থানকুনি পাতা। ফ্রিজেও কয়েকদিন রাখতে পারবেন থানকুনি পাতা। আর যারা গ্রামে বাস করেন তারা বাড়ির আশপাশে খোঁজ করুন, সহজেই মিলে যাবে। 
অথবা যারা আরও একটু সচেতন তারা ইচ্ছে করলেই বাড়ির ছাদে অথবা বারান্দার এক কোনায় টবের ভেতরই লাগাতে পারেন থানকুনি গাছ। চারা পেতেও তেমন কোনো সমস্যা হবে না। যে কোনো নার্সারিতে একটু খুঁজলেই মিলবে থানকুনি গাছ। 




সূত্রঃ উইকিপিডিয়া, সমকাল পত্রিকা, সোনা মাটি নিউজ ( কৃষি বিষয়ক অনলাইন পত্রিকা), ট্রাভেল নিউজ ডট কম ( অনলাইন পত্রিকা), আল জান্নাত(মাসিক ইসলামিক পত্রিকা) 

তেলাকুচা পাতা




ঔষধি গুণে ভরপুর ‘তেলাকুচা পাতাতেলাকুচা বসত বাড়ির আশে পাশেরাস্তার পাশে বনজঙ্গলে জন্মায় এবং বংশ বিস্তার করে সাধারণত চৈত্র বৈশাখ মাসে তেলাকুচা রোপন করতে হয় পুরাতন মূল শুকিয়ে যায় না বলে গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বৃষ্টি হলে নতুন করে পাতা গজায় এবং কয়েক বছর ধরে পুরানো মূল থেকে গাছ হয়ে থাকে অবহেলিত  লতা জাতীয় গাছটি অত্যন্ত উপকারী অনেকটা পটলের মতো দেখতে ফলগুলো পাখিদের খুব প্রিয় গ্রাম বাংলার সহজলভ্য  গাছটিই বহু ভেষজগুণ সমৃদ্ধ উদ্ভিদ ‘তেলাকুচা

অঞ্চল ভেদে একে কুচিলাতেলাতেলাকুচতেলাহচিসহ বিভিন্ন নামে ডাকা হয় স্থানীয় উদ্যানতত্ত্ববিদ  কৃষিবিদরা জানানতেলাকুচা Cucurbitaceae পরিবারভুক্ত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Coccinia grandis তেলাকুচার পাতার রসে আছে ক্যালসিয়ামলোহাভিটামিন  এবং সি। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র প্রাকৃতিকভাবে তেলাকুচা জন্মে। আসুন জেনে নিই এর ঔষধি গুণ আরো জানতে এখানে 
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস হলে তেলাকুচার কাণ্ড সমেত পাতা ছেঁচে রস তৈরি করে আধাকাপ পরিমাণ প্রতিদিন সকাল  বিকালে খেতে হবে। তেলাকুচার পাতা রান্না করে খেলেও ডায়াবেটিস রোগে উপকার হয়
জন্ডিস
জন্ডিস হলে তেলাকুচার মূল ছেঁচে রস তৈরি করে প্রতিদিন সকালে আধাকাপ পরিমাণ খেতে হবে
পা ফোলা রোগে
গাড়িতে ভ্রমণের সময় বা অনেকক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসলে পা ফুলে যায় একে শোথ রোগ বলা হয়। তেলাকুচার মূল  পাতা ছেঁচে এর রস - চা চামচ প্রতিদিন সকালে  বিকালে খেতে হবে
শ্বাসকষ্ট
বুকে সর্দি বা কাশি বসে যাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট (হাপানি রোগ নয়হলে তেলাকুচার মূল  পাতার রস হালকা গরম করে - চা চামচ পরিমাণ  থেকে সাত দিন প্রতিদিন সকালে  বিকালে খেতে হবে

কাশি
কাশি উপশমে - চা চামচ তেলাকুচার মূল  পাতার রস হালকা গরম করে আধা চা-চামচ মধু মিশিয়ে  থেকে  দিন প্রতিদিন সকালে  বিকালে খেতে হবে
স্তনে দুধ স্বল্পতা
সন্তান প্রসবের পর অনেকের স্তনে দুধ আসে না বা শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যায়।  অবস্থা দেখা দিলে ১টা করে তেলাকুচা ফলের রস হালকা গরম করে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে তেলাকচুর পাতা একটু তিতে হওয়ায় পরিমাণমত সকাল-বিকাল  সপ্তাহ খেতে হবে
ফোঁড়া  ব্রণ
 সমস্যায় তেলাকুচা পাতার রস বা পাতা ছেঁচে ফোঁড়া  ব্রণে প্রতিদিন সকাল-বিকাল ব্যবহার করতে হবে
আমাশয়
প্রায়ই আমাশয় হতে থাকলে তেলাকুচার মূল  পাতার রস - চা চামচ  থেকে  দিন প্রতিদিন সকালে  বিকালে খেতে হবে
অরুচিতে
সর্দিতে মুখে অরুচি হলে তেলাকুচার পাতা একটু সিদ্ধ করে পানিটা ফেলে দিয়ে ঘি দিয়ে শাকের মত রান্না করতে হবে। খেতে বসে প্রথমেই সেই শাক খেলে খাওয়াতে রুচি আসবে
 লতা জাতীয় গাছটি অত্যন্ত উপকারী। তাই কৃষক পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষাবাদের জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা দরকার